সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ঢাকা-০৫ আসনে নির্বাচনী গণধিকার পরিষদে মনোনীত প্রার্থীকে পরিচিতি সভা। নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ইয়াবা সহ এক মাদক কারবারি গ্রেফতার কুষ্টিয়ায় বর্ণিল আয়োজনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন বন্দরে বসুন্ধরা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে বয়লার বিষ্ফোরনে দগ্ধ ৬ রূপগঞ্জে ভুমিকম্পে দেয়াল ধসে নবজাতকের মৃত্যু, আহত ২ রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য ঠেকাতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ার দুর্গম চর এলাকায় ৪৭ বিজিবির বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা — সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি মানবিক সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত ডেমরায় মাদরাসায়ে আবু হুরায়রা (রাঃ) ৪৫ জন হাফেজ ও হাফেজার পাগড়ী প্রদান রূপগঞ্জে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দীপু ভূঁইয়া’র সাথে বিএনপি নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ কুষ্টিয়া এন এস রোড দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আখতারুজ্জামান কাজল মাজমাদারকে উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রদান

কুষ্টিয়ায় শীতের আগমনে খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গাছীরা

Reporter Name / ১১৫ Time View
Update : শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫

মো. মুনজুরুল ইসলাম
শীতের আগমনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী যে দৃশ্যপট জেগে ওঠে, তার অন্যতম অংশ হলো খেজুরের রস সংগ্রহ। কুষ্টিয়া জেলার গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে সেই সুগন্ধি রস সংগ্রহের মৌসুম। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে সরজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থানে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছীরা।
প্রকৃতি ইতোমধ্যে শীতের আগমনী বার্তা দিতে শুরু করেছে। শহরে শীতের প্রভাব সীমিত হলেও গ্রামাঞ্চলে সন্ধ্যা নামলেই কুয়াশা আর শিশিরে মিশে যাচ্ছে শীতের পরশ। কার্তিকের শেষেই বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা, আর সেই সঙ্গে জমে উঠছে খেজুর রসের বাজার।
খেজুর গাছের বুক চিরে রস সংগ্রহের এই পদ্ধতি যুগ যুগ ধরে বাংলার ঐতিহ্য। প্রথমে গাছ পরিষ্কার করে তার সাদা অংশ কেটে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। পরে সেখানে নলি লাগিয়ে ছোট-বড় পাত্র বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রসের চাহিদাও বাড়ে। এই রস দিয়েই তৈরি হয় পিঠা, পায়েস ও গুড়—যা গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কুষ্টিয়ার বাইপাস সড়কের পাশে ঢাকা ঝালুপাড়া এলাকায় প্রতিদিনই ভিড় জমছে রসপ্রেমীদের। সকাল-বিকেল বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ এসে কাঁচা খেজুরের রসের স্বাদ নিচ্ছেন। কেউ গ্লাসভর্তি রস খাচ্ছেন, কেউ আবার হাড়াভর্তি রস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি। শুধু কুষ্টিয়ার স্থানীয়রা নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেকে ছুটে আসছেন এই মৌসুমি স্বাদ নিতে।
স্থানীয় গাছিরা জানিয়েছেন, প্রায় ২৫০টি খেজুরগাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই রস দিয়েই তৈরি করা হয় কুষ্টিয়ার বিখ্যাত খেজুরের গুড় ও পাটালি, যার সুনাম সারা দেশে। রস সংগ্রহে যুক্ত রয়েছেন মো. রবিউল ইসলাম, মো. বিপ্লব হোসেন, মো. ইদবার আলী ও মো. নাসির উদ্দিন। তারা জানান, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে এসে কুষ্টিয়ায় মৌসুমজুড়ে এই কাজ করে আসছেন।
বর্তমানে প্রতি কেজি খেজুরের গুড় ও পাটালি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়, বড় হাড়াভর্তি রস ৪০০ টাকায় এবং ছোট হাড়ার দাম ২০০ টাকা। এক গ্লাস কাঁচা রস বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়, আর এক লিটার রস ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
খেজুরের রস শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এতে প্রচুর আয়রন থাকে, যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক টুকরো পাটালি বা ঝোলা গুড় খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই শীতকালের সকালে এক গ্লাস খেজুরের রস যেন প্রাকৃতিক টনিকের মতো কাজ করে।
সন্ধ্যা নামলে রসের দোকানগুলোর সামনে ভিড় আরও বেড়ে যায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষজন রস খেতে আসে এবং রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বিক্রি। সকালের রসের বেশির ভাগ অংশ দিয়েই গাছিরা সেখানেই তৈরি করেন গুড় ও পাটালি।
স্থানীয় খেজুরগাছি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ছয় বছর ধরে আমি খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। প্রতিদিন ভোরে গাছে বাঁধা কলস থেকে রস নামিয়ে আনি। এই রস দিয়েই তৈরি করি খেজুরের গুড় ও পাটালি, যা আমাদের জীবিকার প্রধান উৎস।”
রসপ্রেমী স্থানীয় ক্রেতা উজ্জ্বল রহমান বলেন, “কুষ্টিয়ার খেজুরের রসের খ্যাতি অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। প্রতি বছর শীত এলেই মানুষ অপেক্ষা করে থাকে এই প্রাকৃতিক মিষ্টির জন্য।”
আরেক ক্রেতা মোসায়েব আহমেদ জানান, “প্রতিবছর শীতের সময় আমরা খেজুরের রসের স্বাদ গ্রহণ করি। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। শীত যত বাড়বে, রস ততই মিষ্টি ও সুস্বাদু হবে।”
স্থানীয়রা জানান, খেজুরের রস শুধু একটি ঐতিহ্য নয়, এটি শীতকালীন আনন্দের প্রতীক। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে রসের পরিমাণ ও স্বাদ আরও বাড়বে। তখন ভোরবেলা গ্রামে গ্রামে দেখা যাবে খেজুরের রস বিক্রির ব্যস্ততা।
শীতের এই সময়ে খেজুরের রস কুষ্টিয়াবাসীর সকালকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত ও মিষ্টিময়। এই কাঁচা রস দিয়েই তৈরি হয় ফিরনি, মিঠাই ও সুস্বাদু পায়েস—যা শীতকালীন খাবারের ঐতিহ্যকে আরও বর্ণময় করে তোলে।
গ্রামীণ জীবনের এই অনন্য স্বাদ ও ঐতিহ্য কুষ্টিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে একীভূত হয়ে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর