কুষ্টিয়ার মিরপুরে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি কৃষকদের স্বস্তি—সংকটহীন বাজারে আস্থা ফিরছে চাষিদের
মো. মুনজুরুল ইসলাম:
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মাজিহাট বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি অব্যাহত থাকায় কৃষকদের মাঝে স্বস্তির হাওয়া বইছে। শীতকালীন রবি মৌসুমে ধান, গম, সরিষা ও সবজি চাষ বাড়ায় এ সময় সারের চাহিদা সাধারণের তুলনায় বেশি দেখা গেলেও কোথাও কোনো ঘাটতি বা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়নি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি—সব ধরনের সারই স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে। ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী তারা নির্ধারিত দামে সার পাচ্ছেন। নিয়মিত সরবরাহ বজায় থাকায় অতিরিক্ত মূল্য বা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে না।
কৃষক হাবিবুল্লাহ বলেন, “ডিলারের কাছে গেলে সরকার নির্ধারিত দামেই সার পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক সময় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিতে হলে বেশি টাকা দিতে হয়। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়।
কৃষক আমানুল্লাহ বলেন, “ফসল ফলানোতেই এখন অনেক খরচ। যদি সারের দাম বাড়তি গুনতে হয়, তাহলে কৃষিকাজ লাভজনক থাকবে না। সরকার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করুক—এটাই আমাদের চাওয়া।
কৃষক আমানত আলী আক্ষেপ করে বলেন, “ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরিবের দিকে তাকানোর লোক নেই। জমিতে ফসল ফলাই, সেই ফসল বিক্রি করে সংসার চলে। সার যদি বেশি দামে কিনতে হয় তাহলে পরিবার চালানোই ভার হয়ে যায়।
মাজিহাট বাজারে মেসার্স মীর মুসা ওলিউল্লাহ এন্ড ব্রাদার্স নিয়মিত সারের মূল্য তালিকা হালনাগাদ করে প্রদর্শন করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি মো. মিরাজুল ইসলাম বলেন,
“আমরা সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রি করছি। কৃষকদের যেন সুলভে সার পাওয়া যায়, সে বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখি।
প্রকাশিত সারের সরকারি মূল্য ইউরিয়া: প্রতি কেজি ২৭ টাকা, প্রতি বস্তা ১,৩৫০ টাকা।
টিএসপি: প্রতি কেজি ২৭ টাকা, প্রতি বস্তা ১,৩৫০ টাকা।
এমওপি: প্রতি কেজি ২০ টাকা, প্রতি বস্তা ১,০০০ টাকা।
ডিএপি: প্রতি কেজি ২১ টাকা, প্রতি বস্তা ১,০৫০ টাকা।
কৃষকদের দাবিতে, এই দামের স্থিতিশীলতা উৎপাদন ব্যয় কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলায় কোথাও সারের ঘাটতি নেই। বাজারে সার পর্যাপ্ত আছে এবং সরকারি মূল্য অনুসারে বিক্রি হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও যোগ করেন, “কৃষি ও কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি।
মাজিহাট বাজারের কৃষকরা আশা প্রকাশ করেছেন, নিয়মিত মূল্য তালিকা প্রকাশ ও প্রশাসনের তদারকি অব্যাহত থাকলে সার বাজারে স্বচ্ছতা আরও বাড়বে এবং অনিয়ম কমবে। এতে কৃষি উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।
সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে মিরপুরের কৃষকরা এ মৌসুমে নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।








