কুষ্টিয়ার সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায়ে বিজিবির সাহসিক নেতৃত্বে স্বস্তি ফিরেছে সীমান্ত জনপদে
: মো. মুনজুরুল ইসলাম
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে থাকা কুষ্টিয়ার সীমান্ত জনপদে বিরাজ করছে অভূতপূর্ব শান্তি ও নিরাপত্তা। একসময় যেখানে চোরাচালান, মাদক ও অনুপ্রবেশ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা, সেখানে এখন বিজিবির কঠোর নজরদারি, দক্ষ নেতৃত্ব ও আধুনিক ব্যবস্থাপনায় ফিরেছে স্থিতিশীলতা ও স্বস্তির পরিবেশ। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সরোজমিন ঘুরে দেখা যায় সীমান্ত এলাকার জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তারা নির্বিঘ্নে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের মধ্যে চাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কুষ্টিয়া সীমান্তে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর বা আপত্তিকর ঘটনা ঘটেনি। দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সদস্যরা এখন দিনরাত টহল দিচ্ছেন নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরে বিজিবির সিজার (জব্দ) মূল্য ছিল প্রায় ৬৮ কোটি টাকা, যেখানে ৩৭ জন আসামি গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পণ্য ছিল মাদকদ্রব্য। পরবর্তী ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরে সিজার মূল্য দাঁড়ায় ১০৮ কোটি টাকা এবং ১২৬ জন আসামি গ্রেফতার হয়। এর মধ্যে ৯৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার পণ্য ছিল মাদকদ্রব্য।
তিনি আরও জানান, “গত ছয় মাসে আমরা ৭ জন আসামি ও ৫টি অটোমেটিক পিস্তল আটক করতে সক্ষম হয়েছি। তবে মাদকদ্রব্যের চাহিদা বন্ধ করা না গেলে শুধু প্রশাসন বা বিজিবির পক্ষে এককভাবে চোরাকারবারি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”
বিজিবির এই সাফল্যের পেছনে রয়েছেন বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, ওএসপি, বিএসপি, এসইউপি, বিজিবিএম, এনডিসি, পিএসসি, এমফিল— যার সাহসিক নেতৃত্ব, দূরদর্শী পরিকল্পনা ও আধুনিক ব্যবস্থাপনায় সীমান্ত নিরাপত্তা কার্যক্রমে এসেছে বিপুল অগ্রগতি। তার নেতৃত্বে বিজিবি এখন আরও আধুনিক, দক্ষ ও জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
সীমান্ত এলাকায় এখন চাষাবাদ, বাণিজ্য ও জনজীবন নির্বিঘ্নে চলছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামে এখন শান্তিপূর্ণভাবে চলছে কৃষিকাজ। স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্টু মেম্বার বলেন,“বর্ডারের কোল ঘেঁষে আমাদের জমিতে আমরা নিশ্চিন্তে আবাদ করি। বিজিবির টহল জোরদারের কারণে ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা কোনো রকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না।”
ধর্মদহ গ্রামের কৃষক জবেদ আলী জানান,“বিজিবির সঠিক নেতৃত্বের কারণেই আমরা এখন শান্তিতে বসবাস করছি। আগের তুলনায় সীমান্তে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। বিজিবি মহাপরিচালককে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
স্থানীয়দের মতে, বিজিবির দৃঢ় নেতৃত্ব ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে সীমান্তে আজ শান্তি ও আস্থার পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৩ জুন সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকেই তাঁর তত্ত্বাবধানে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সমন্বিত কার্যক্রম দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিজিবি জনগণের সহযোগিতায় স্থানীয় উন্নয়ন ও মানবিক কর্মকাণ্ডেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিজিবির নিয়মিত টহল, মানবিক আচরণ ও পেশাদারিত্বের কারণে সীমান্তের মানুষ এখন নির্ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শিশুরা ভয়হীনভাবে স্কুলে যাচ্ছে, কৃষকরা নির্বিঘ্নে মাঠে কাজ করছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,“বিজিবির দায়িত্বশীল আচরণের কারণে এখন আমরা অনেক নিরাপদে বসবাস করছি। সীমান্তে আগের মতো কোনো উত্তেজনা নেই।”
বিজিবির এই প্রশংসনীয় ভূমিকা শুধু সীমান্ত সুরক্ষায় নয়, বরং দেশের সার্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সরকারের নীতিগত দিকনির্দেশনা ও সেনাপ্রধানের তত্ত্বাবধানে বিজিবি আজ সীমান্ত জনপদের মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।








